মাইগ্রেন হলো একধরণের তীব্র মাথাব্যথা যা বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত করে। এটি সাধারণত মাথার একদিকে তীব্র, স্পন্দিত ব্যথার মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয় এবং বমি বমি ভাব, বমি এবং আলো ও শব্দের প্রতি সংবেদনশীলতা বৃদ্ধির সাথেও থাকতে পারে। মাইগ্রেন আক্রমণ কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েক দিন স্থায়ী হতে পারে এবং এটি ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবনে উল্লেখযোগ্য বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
মাইগ্রেন কারণ:
মাইগ্রেনের সঠিক কারণ এখনও অজানা, তবে বিশ্বাস করা হয় যে এটি জিনগত এবং পরিবেশগত কারণগুলির মিথস্ক্রিয়ার ফলে হয়।
- জিনগত কারণ: মাইগ্রেনের পারিবারিক ইতিহাস থাকা ব্যক্তিদের মাইগ্রেন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে যে মাইগ্রেনের সাথে যুক্ত বেশ কয়েকটি জিন রয়েছে।
- পরিবেশগত কারণ: মাইগ্রেন ট্রিগারগুলি ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে পরিবর্তিত হতে পারে, তবে কিছু সাধারণ ট্রিগারগুলির মধ্যে রয়েছে:
- চাপ
- খাদ্য: কিছু নির্দিষ্ট খাবার, যেমন চকলেট, পনির এবং লাল ওয়াইন, কিছু লোকেদের মধ্যে মাইগ্রেন ট্রিগার করতে পারে।
- পানিশূন্যতা
- ঘুমের অভাব
- অতিরিক্ত মদ্যপান
- ক্যাফেইন
- চোখের চাপ
- জোরে আলো, শব্দ বা গন্ধ
- মাসিক চক্র
- কিছু ওষুধ
মাইগ্রেনের উপসর্গ:
মাইগ্রেনের সাধারণ উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে:
- মাথার একদিকে তীব্র, স্পন্দিত ব্যথা এটি সবচেয়ে বৈশিষ্ট্যময় উপসর্গ। ব্যথা মাঝারি থেকে তীব্র হতে পারে এবং এটি এত তীব্র হতে পারে যে কাজ করা বা কথা বলা কঠিন করে তোলে।
- বমি বমি ভাব এবং বমি: প্রায় 70% মাইগ্রেন রোগীর বমি বমি ভাব বা বমি হয়।
- আলো এবং শব্দের প্রতি সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি: আক্রমণের সময়, আলো এবং শব্দের প্রতি সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
- খাদ্যের ক্ষুধা হ্রাস
- পেটে ব্যথা
- দুর্বলতা
- মাথার ঘোরা
- চোখের পাতা ঝুলো
- চোখের চারপাশে লালভাব
মাইগ্রেনের ধরণ:
মাইগ্রেনকে দুটি প্রধান বিভাগে ভাগ করা যায়:
- সাধারণ মাইগ্রেন (Without aura): এটি সবচেয়ে সাধারণ ধরণের মাইগ্রেন, যা মাইগ্রেন রোগীদের 80% এরও বেশি প্রভাবিত করে।
অরার সাথে মাইগ্রেন: উপসর্গ, কারণ, চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ
অরার সাথে মাইগ্রেন হলো এক ধরণের মাইগ্রেন যা আক্রমণের শুরুতে স্নায়বিক ঘটনা (aura) দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। এই ঘটনাগুলি দৃষ্টি, স্পর্শ, গন্ধ বা চলাফেরার পরিবর্তন অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। অরার সাথে মাইগ্রেনের উপসর্গগুলি সাধারণ মাইগ্রেনের মতোই, তবে অতিরিক্ত উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে:
- চোখের সামনে ঝলকানি, আলোর ঝলকানি বা লাইন
- দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন
- হাত, পা বা মুখে একপাশে বা উভয় পাশে সুन्नता বা ঝিনঝিনে ভাব
- বক্তৃতা বা ভাষা বোঝার সমস্যা
- চक्कर आना
- চামড়ায় ঠান্ডা বা গরম অনুভূতি
কারণ:
অরার সাথে মাইগ্রেনের সঠিক কারণ অজানা, তবে মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশে বিদ্যুৎ সংকেতের পরিবর্তনের সাথে এটি সম্পর্কিত বলে মনে করা হয়। এই পরিবর্তনগুলি কীভাবে ঘটে তা এখনও পুরোপুরি বোঝা যায় না, তবে জিনগত এবং পরিবেশগত কারণগুলির মিথস্ক্রিয়া জড়িত থাকতে পারে।
মাইগ্রেন চিকিৎসা:
মাইগ্রেনের কোন নিরাময় নেই, তবে চিকিৎসা আক্রমণের তীব্রতা এবং ঘটনার সংখ্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- ওষুধ: মাইগ্রেনের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন ধরণের ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে:
- ট্রিপ্টানস: এগুলি মাইগ্রেনের জন্য সবচেয়ে কার্যকর ওষুধগুলির মধ্যে একটি।
- এর্গোটামিন: এগুলি ট্রিপ্টানসের মতো কাজ করে এবং কিছু লোকের জন্য কার্যকর হতে পারে যারা ট্রিপ্টানস vertragen করতে পারে না।
- বমি বমি ভাবের জন্য ওষুধ: এগুলি বমি বমি ভাব এবং বমি উপশম করতে সাহায্য করতে পারে।
- প্রতিরোধমূলক ওষুধ: যদি আপনার প্রায়শই মাইগ্রেন হয়, তবে আপনার ডাক্তার দীর্ঘমেয়াদী প্রতিরোধমূলক ওষুধের পরামর্শ দিতে পারেন।
- অন্যান্য চিকিৎসা: ওষুধ ছাড়াও, মাইগ্রেন ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করার জন্য অন্যান্য চিকিৎসাও ব্যবহার করা যেতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে:
- আচরণগত থেরাপি: এই থেরাপিগুলি আপনাকে আপনার মাইগ্রেন ট্রিগারগুলি চিহ্নিত করতে এবং পরিচালনা করতে শেখাতে পারে।
- বায়োফিডব্যাক: এই থেরাপি আপনাকে আপনার শরীরের কিছু কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করতে শেখাতে পারে যা মাইগ্রেন ট্রিগার করতে পারে,
মাইগ্রেন প্রতিরোধের উপায়:
- আপনার ট্রিগারগুলি চিহ্নিত করুন এবং এড়িয়ে চলুন: আপনার মাইগ্রেন ট্রিগারগুলি কী তা জানা গুরুত্বপূর্ণ যাতে আপনি এগুলি এড়াতে পারেন। সাধারণ ট্রিগারগুলির মধ্যে রয়েছে চাপ, খাদ্য, ঘুমের অভাব, অ্যালকোহল এবং ক্যাফেইন।
- একটি নিয়মিত সময়সূচী বজায় রাখুন: প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে এবং জাগতে যাওয়ার চেষ্টা করুন, এমনকি সপ্তাহান্তেও। এটি আপনার শরীরের একটি নিয়মিত ছন্দ বজায় রাখতে সাহায্য করবে এবং মাইগ্রেন আক্রমণের ঝুঁকি কমাতে পারে।
- পর্যাপ্ত ঘুম পান: বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি রাতে 7-8 ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়। ঘুমের অভাব একটি সাধারণ মাইগ্রেন ট্রিগার হতে পারে।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন: নিয়মিত ব্যায়াম চাপ কমাতে এবং মাইগ্রেন আক্রমণের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- স্বাস্থ্যকর খাবার খান: একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য খাওয়া যা ফল, শাকসবজি এবং গোটা শস্য সমৃদ্ধ তা আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য ভাল এবং মাইগ্রেন আক্রমণের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন: যদি আপনি অতিরিক্ত ওজনের হন তবে ওজন কমানো মাইগ্রেন আক্রমণের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- চাপ পরিচালনা করুন: চাপ একটি সাধারণ মাইগ্রেন ট্রিগার। যোগব্যায়াম, ধ্যান এবং গভীর শ্বাসের ব্যায়ামের মতো চাপ ব্যবস্থাপনা কৌশলগুলি অনুশীলন করা গুরুত্বপূর্ণ।
- ক্যাফেইন, অ্যালকোহল এবং নিকোটিন এড়িয়ে চলুন: এই পদার্থগুলি মাইগ্রেন ট্রিগার হতে পারে।
- ওষুধ নিয়মিতভাবে গ্রহণ করুন: আপনার যদি প্রতিরোধমূলক ওষুধের জন্য একটি প্রেসক্রিপশন থাকে, তবে নিশ্চিত করুন যে আপনি এগুলি নিয়মিতভাবে গ্রহণ করছেন, এমনকি যখন আপনার মাইগ্রেন না থাকে।
মনে রাখবেন:
- এই তথ্যগুলি কেবলমাত্র তথ্যগত উদ্দেশ্যে এবং চিকিৎসা পরামর্শের বিকল্প নয়।
- আপনার যদি মাইগ্রেন থাকে বা মাইগ্রেন সম্পর্কে প্রশ্ন থাকে তবে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
অতিরিক্ত তথ্য: