হজ্জ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে একটি এবং সুস্থ, সক্ষম ও অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল মুসলমানদের জীবদ্দশায় অন্তত একবার ফরজ। হজ্জ কেবল একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং এটি আত্ম-সংশোধন, আধ্যাত্মিক উন্নয়ন এবং ঐশ্বরিক সান্নিধ্য লাভের একটি অনন্য সুযোগ। হজের মাধ্যমে মুসলমানরা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, তাদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, এবং সমাজের সকল স্তরের মানুষের সাথে ঐক্য ও সমতা প্রতিষ্ঠা করে।
হজের ফরজ কাজ:
- ইহরাম: হজের নিয়ত করে মীকাত স্থান থেকে ইহরাম পরিধান করা। ইহরাম পুরুষদের জন্য দুটি সাদা কাপড় এবং মহিলাদের জন্য একটি সাদা জামা ও ওড়না। ইহরামের সময় কিছু নির্দিষ্ট কাজ করা নিষিদ্ধ, যেমন স্ত্রীর সাথে সহবাস, চুল কাটা, নখ কাটা ইত্যাদি।
- আরাফাতে ওয়াকুফ: হজের নির্দিষ্ট দিনে (৯ই জিলহজ্জ) সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতে অবস্থান করা। আরাফাত হল মক্কার বাইরে একটি সমতল ভূমি যেখানে হজরত ইব্রাহীম (আঃ) ও হজরত ইসমাইল (আঃ)-কে কুরবানির নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। আরাফাতে ওয়াকুফ হজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এ সময় মুসলমানরা আল্লাহর কাছে দু'আ ও ক্ষমা প্রার্থনা করে।
- তওয়াফ: কাবা ঘরের চারপাশে ঘুরে তাওয়াফ করা। তাওয়াফ হজের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এটি কাবা ঘরের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য করা হয়। তাওয়াফের সময় মুসলমানরা কাবা ঘরের বিপরীতে হাত তুলে দু'আ করে এবং সাত বার ঘুরে তাওয়াফ সম্পন্ন করে।
- সা'ঈ: সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে সাত বার দৌড়ানো। সা'ঈ হজরত হাজেরা (রাঃ) ও তাঁর পুত্র ইসমাইল (আঃ)-কে স্মরণ করে করা হয়। হজরত হাজেরা (রাঃ) পানি খোঁজার জন্য এই দুটি পাহাড়ের মধ্যে দৌড়ে বেড়িয়েছিলেন।
- হজম: হজের সমাপ্তি চিহ্নিত করার জন্য মাথার চুল বা দাড়ি কাটা। হজম করার পর মুসলমানরা ইহরাম খুলে ফেলে।
হজের ওয়াজিব কাজ:
- মুজদালিফায় রাত কাটানো: আরাফাতের পর মুজদালিফায় রাত কাটানো। মুজদালিফা হল আরাফাতের কাছে একটি স্থান যেখানে হজরত ইব্রাহীম (আঃ) ও হজরত ইসমাইল (আঃ) শয়তানকে রমণি করেছিলেন।
- জামারাতে শয়তানকে রমণি: মুজদালিফা থেকে ফিরে জামারাতে তিনটি স্তম্ভে সাত সাতটি করে কুঁচি মারা। জামারাতে শয়তানকে রমণি হজরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর কুরবানির ঘটনার স্মরণে করা হয়।
- হজের সময় কোরবানি: হজের ফরজ কাজ না হলেও, হজের সময় কোরবানি করা ওয়াজিব। কোরবানির মাংস গরিব ও অভাবীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
হজের সুন্নত কাজ:
- হজের পূর্বে ওমরাহ করা: হজের পূর্বে ওমরাহ করা সুন্নত। ওমরাহ হজের অনুরূপ একটি ছোট আচার-অনুষ্ঠান যা মক্কায় সম্পাদিত হয়।
- হজের সময় জিহাদ: হজের সময় জিহাদ করা সুন্নত। জিহাদ মানে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করা।
- হজের সময় বেশি দু'আ করা: হজের সময় বেশি দু'আ করা সুন্নত। আল্লাহর কাছে দু'আ করার মাধ্যমে মুসলমানরা তাদের চাহিদা পূরণের প্রার্থনা করে।
- হজের সময় বেশি তালবিয়া পাঠ করা: হজের সময় বেশি তালবিয়া পাঠ করা সুন্নত। তালবিয়া হল হজের সময় পাঠ করা একটি বিশেষ দু'আ।
উপসংহার:
হজ্জ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত যা মুসলমানদের জীবনে বিরাট প্রভাব ফেলে। হজ্জের মাধ্যমে মুসলমানরা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, তাদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, আত্ম-সংশোধন ও আধ্যাত্মিক উন্নয়ন অর্জন করে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করে। হজ্জ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত মুসলমানদের ঐক্য ও সমতার প্রতীক এবং মানবতার সেবার একটি সুযোগ।
আরও জানতে: