সাকার ফিশকে কেন 'শয়তান মাছ' বলা হয়?

সাকার ফিশকে "শয়তান মাছ" বলা হয় কারণ এর বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যা অনেককেই ভয়ানক মনে হয়।

সাকার ফিশকে

  • আক্রমণাত্মক আচরণ: সাকার ফিশ অন্যান্য মাছের সাথে আক্রমণাত্মক আচরণ প্রদর্শন করতে পারে, বিশেষ করে যখন তারা প্রজনন করে। তারা তাদের ধারালো পাখনা দিয়ে অন্য মাছকে আঘাত করতে পারে এবং এমনকি হত্যাও করতে পারে।
  • দ্রুত বংশবৃদ্ধি: সাকার ফিশ অত্যন্ত দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে। একটি পূর্ণবয়স্ক মাদী সাকার ফিশ একবারে হাজার হাজার ডিম পাড়তে পারে। এর ফলে, তারা খুব দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে এবং স্থানীয় মাছের প্রজাতির জন্য হুমকি তৈরি করতে পারে।
  • খাদ্য অভ্যাস: সাকার ফিশ সর্বভুক, অর্থাৎ তারা মাংস এবং উদ্ভিদ উভয়ই খায়। তারা জলজ উদ্ভিদ, ছোট মাছ, পোকামাকড় এবং এমনকি শেত্তলা খায়। এর ফলে তারা স্থানীয় মাছের প্রজাতির সাথে খাদ্যের জন্য প্রতিযোগিতা করতে পারে এবং জলজ উদ্ভিদের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।
  • বড় আকার: কিছু প্রজাতির সাকার ফিশ ৪ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। তাদের বড় আকার এবং আক্রমণাত্মক আচরণের কারণে, তারা সাঁতারুদের জন্য হুমকি তৈরি করতে পারে।

এই কারণগুলো ছাড়াও, সাকার ফিশের চেহারাও অনেকের কাছে ভয়ানক মনে হতে পারে। তাদের বড়, চোষাকার মুখ, ধারালো পাখনা এবং শক্ত আঁশ তাদেরকে রাক্ষসের মতো দেখাতে পারে।

তবে, এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে সব সাকার ফিশই একই রকম হয় না। কিছু প্রজাতি অন্যদের তুলনায় বেশি শান্তিপ্রিয় এবং আক্রমণাত্মক হয় না।

বাংলাদেশে সাকার ফিশ:

বাংলাদেশে সাকার ফিশ একটি আক্রমণাত্মক প্রজাতি হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি মূলত দক্ষিণ আমেরিকার স্থানীয়, কিন্তু অ্যাকোয়ারিয়াম ট্রেডের মাধ্যমে এটি বাংলাদেশে এসেছে এবং এখন অনেক নদী, খাল ও বিল-বাঁধে পাওয়া যায়। সাকার ফিশের দ্রুত বংশবৃদ্ধি এবং আক্রমণাত্মক আচরণের কারণে এটি স্থানীয় মাছের প্রজাতির জন্য হুমকি তৈরি করছে।

উদাহরণ:

  • আমাজন নদীর স্থানীয় মাছের প্রজাতির উপর সাকার মাছের বিরূপ প্রভাবের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
  • ফ্লোরিডায়, সাকার মাছের কারণে অনেক স্থানীয় মাছের প্রজাতি বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে।
  • বাংলাদেশে, সাকার মাছকে আক্রমণাত্মক প্রজাতি হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে এবং এর আমদানি, বিক্রি ও পরিবহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

মনে রাখবেন:

  • সব সাকার মাছই এক রকম নয়। কিছু প্রজাতি অন্যদের তুলনায় বেশি শান্তিপ্রিয়।
  • অ্যাকোয়ারিয়ামে সাকার মাছ রাখার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
  • পরিবেশে ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়।

২০২০ সালে, বাংলাদেশ সরকার সাকার ফিশ আমদানি, বিক্রি এবং পরিবহনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

উপসংহার:

সাকার ফিশকে "শয়তান মাছ" বলা হয় কারণ এর আক্রমণাত্মক আচরণ, দ্রুত বংশবৃদ্ধি, খাদ্য অভ্যাস, বড় আকার এবং চেহারা। বাংলাদেশে এটি একটি আক্রমণাত্মক প্রজাতি এবং স্থানীয় মাছের প্রজাতির জন্য হুমকি।

Kalam posts

Post a Comment

Previous Post Next Post