পাবনা জেলার ইতিহাস।

 পাবনা জেলার ইতিহাস । 

পাবনা জেলা ঐতিহ্য ও বৈচিত্র্যের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ধারণ করে। 

ঐতিহ্যবাহী ভূমি
পাবনা জেলার ইতিহাস

প্রাচীনকাল:

  • পাবনা জেলার ইতিহাস বেশ দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে জানা যায়, অন্তত ৫ম শতাব্দী খ্রিস্টপূর্ব থেকে এই অঞ্চলে মানুষ বসবাস করছে।
  • 'পাবনা' নামের উৎপত্তি নিয়ে একাধিক মতবাদ রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, 'পৌন্ড্রবর্ধন' নাম থেকেই 'পাবনা' নামের উৎপত্তি। আবার কেউ কেউ বলেন, 'পদ্ম' নদীর তীরে অবস্থিত থাকায় এর নাম 'পাবনা' হয়েছে।
  • ঐতিহাসিকদের মতে, পাবনা জেলা বর্ধনমান, গৌড় ও সেন রাজাদের অধীনে ছিল।

মধ্যযুগ:

  • মধ্যযুগে, পাবনা জেলা মুসলিম শাসনভোগ করে।
  • 'পদ্ম' নদী ছিল জেলার প্রধান জলপথ, যা বাণিজ্য ও যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
  • এই সময়, পাবনা জেলায় বেশ কিছু মসজিদ ও স্থাপত্য নিদর্শন নির্মিত হয়।

ব্রিটিশ আমল:

  • ১৭৬৫ সালে, পাবনা জেলা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনভোগ করে।
  • ব্রিটিশ আমলে, পাবনা জেলা কৃষি ও বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হয়।
  • এই সময়, পাবনা জেলায় রেলপথ স্থাপিত হয় এবং শিল্প-কারখানার বিকাশ ঘটে।

স্বাধীনতা যুদ্ধ:

  • ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাবনা জেলার মানুষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং বেশ কিছু যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

স্বাধীনতা লাভের পর:

  • স্বাধীনতা লাভের পর, পাবনা জেলা বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা হিসেবে বিকশিত হয়।
  • কৃষি, শিল্প, শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে পাবনা জেলা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করে।

ঐতিহাসিক স্থান:

  • পাবনা জেলায় বেশ কিছু ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
    • মসজিদ: শাহী মসজিদ (চাটমোহর), কাঁচা মসজিদ (পাবনা সদর), খাজা আউলিয়ার মসজিদ (ঈশ্বরদী)
    • প্রাসাদ: রাজবাড়ি (সাঁথিয়া)
    • স্থাপত্য নিদর্শন: ঈশ্বরদী মন্দির, ভাঙ্গুড়া মন্দির, সুজানগর মন্দির
    • প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন: বড়বাড়ি (ঈশ্বরদী), বেড়া (পাবনা সদর)

সংস্কৃতি:

পাবনা জেলা ঐতিহ্য ও বৈচিত্র্যের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ধারণ করে। লোকসঙ্গীত, লোকনৃত্য, লোকাচার, ধর্মীয় উৎসব, ঐতিহ্যবাহী খাবার, উৎসব ও মেলা - সব মিলিয়ে পাবনার সংস্কৃতি এক অনন্য রূপ ধারণ করে।

লোকসংস্কৃতি:

  • 'ভাটিয়ালী', 'ধামালী', 'গম্ভীরা', 'কীর্তন' জনপ্রিয় লোকসঙ্গীত।
  • 'ধামালী', 'নৌকা বাইচের গান' জনপ্রিয় লোকনৃত্য।
  • 'পুতুল খেলা', 'নকশিকাঁথা', 'মৃৎশিল্প' জনপ্রিয় লোকাচার।

ধর্মীয় উৎসব:

  • ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা মুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ উৎসব।
  • দুর্গাপূজা হিন্দুদের একটি বড় ধর্মীয় উৎসব।

ঐতিহ্যবাহী খাবার:

  • 'পোলাও', 'ইলিশ মাছ', 'রসগোল্লা', 'ল্যাংচা' জনপ্রিয় খাবার।

উল্লেখযোগ্য উৎসব:

  • পুতুল নাচের মেলা
  • লালন মেলা

পাবনার সংস্কৃতি ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধ ও আধুনিকতার এক মিশ্রণ। সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হলেও, এর মূল সারমর্ম টিকে আছে, যা এটিকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলে।

ভিডিও তথ্যঃ


Post a Comment

Previous Post Next Post