মসজিদে নববী

মসজিদে নববী, যা "নবীর মসজিদ" নামেও পরিচিত, ইসলামের দ্বিতীয় পবিত্রতম স্থান এবং মসজিদুল হারামের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ। মদিনা শহরে অবস্থিত এই মসজিদটি হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) নিজেই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং এটি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মসজিদে নববী

ইতিহাস ও তাৎপর্য:

  • প্রতিষ্ঠা: হিজরতের পর ৬২২ সালে মসজিদে নববী নির্মাণ করা হয়েছিল। হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) নিজেই মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন এবং তার সাহাবিদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নির্মাণকাজে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
  • ধর্মীয় গুরুত্ব: মসজিদে নববীতে নামাজ আদায় করা মসজিদুল হারাম ছাড়া অন্য যেকোনো মসজিদে নামাজ আদায় করার চেয়ে অনেক বেশি সওয়াব। এছাড়াও, হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর রওজা এই মসজিদের ভেতরে অবস্থিত, যা মুসলমানদের তীর্থস্থান হিসেবে পরিণত হয়েছে।
  • সামাজিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব: মসজিদে নববী শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় স্থান নয়, বরং এটি একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রও। এখানে জ্ঞান অর্জন, আলোচনা, সমাজসেবা এবং অন্যান্য সামাজিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

স্থাপত্য ও সৌন্দর্য:

  • ঐতিহাসিক স্থাপত্য: মসজিদে নববীর স্থাপত্য ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মসজিদের মূল ভবনটি সাদা মার্বেল দিয়ে তৈরি এবং এর ছাদে সবুজ রঙের গম্বুজ রয়েছে। মসজিদের ভেতরে মিনার ও ঝাড়বাতি, মার্বেল ও টাইলসের মেঝে, এবং কুরআনের আয়াত লিখিত দেয়াল রয়েছে।
  • সম্প্রসারণ: মসজিদে নববী বারবার সম্প্রসারিত হয়েছে। ১২শ শতাব্দীতে উসমানীয় সুলতানদের দ্বারা এবং ২০শ শতাব্দীতে মসজিদটি আরও বেশি সম্প্রসারিত করা হয়। বর্তমানে মসজিদের আয়তন ১৬৮,০০০ বর্গমিটার।

মসজিদে নববীর কিছু আকর্ষণীয় স্থান:

  • হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর রওজা: মুসলমানদের কাছে এটি একটি অত্যন্ত পবিত্র স্থান।
  • মিহরাব-ই-নববী: যেখানে হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) নামাজ আদায় করতেন।
  • মিনবার-ই-নববী: যেখান থেকে হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) খুতবা দিতেন।
  • রওজা-ই-আবু বকর ও রওজা-ই-উমর: হজরত আবু বকর ও হজরত উমর (রাঃ)-এর রওজা।
  • বাব-ই-জিব্রীল: এই দরজা দিয়ে হজরত জিব্রীল (আঃ) মসজিদে প্রবেশ করতেন।
  • বাব-ই-রহমাহ: এই দরজা দিয়ে নবী (সাঃ) মৃত্যুর আগে শেষবার মসজিদে প্রবেশ করেছিলেন।
  • কুব্বা-ই-খضراء: মসজিদের সবুজ গম্বুজ।
  • মিনার-ই-নববী: মসজিদের মিনারগুলো।
  • সাহাবিদের সমাধি: অনেক বিখ্যাত সাহাবির সমাধি মসজিদের প্রাঙ্গণে অবস্থিত।
  • জান্নাতুল বাকী: মুসলমানদের দ্বিতীয় পবিত্রতম কবরস্থান, যেখানে অনেক সাহাবি ও তাবেঈ দাফন করা আছে।

মসজিদে নববীর নিয়ম-কানুন:

  • পোশাক: মসজিদে নববীতে পুরুষদের জন্য হাঁটু পর্যন্ত পোশাক এবং মহিলাদের জন্য পুরো শরীর ঢাকা পোশাক পরিধান করা আবশ্যক।
  • শুভ্রতা: মসজিদে প্রবেশের আগে ওضو (ওজু) করা আবশ্যক।
  • শান্তি: মসজিদে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা আবশ্যক।
  • নামাজ: মসজিদে নববীতে নামাজ আদায় করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ।
  • শ্রদ্ধা: মসজিদে নববীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ করা আবশ্যক।

উপসংহার:

মসজিদে নববী শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় স্থান নয়, বরং এটি ইসলামের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক। মসজিদে নববীতে তীর্থযাত্রা করা প্রতিটি মুসলমানের স্বপ্ন এবং এটি তাদের জীবনে অমলিন স্মৃতি রেখে যায়।

আরও জানতে:


Kalam posts

Post a Comment

Previous Post Next Post