বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ইউনিয়ন পরিষদের করণীয়।

ইউনিয়ন পরিষদ, গ্রাম পর্যায়ের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কেবল আইন প্রয়োগের মাধ্যমেই নয়, বরং ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধি, সমাজসেবা প্রদান এবং বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে তারা এই কুপ্রথা দূর করতে সহায়তা করতে পারে।

বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ইউনিয়ন পরিষদের করণীয়

সচেতনতা বৃদ্ধি:

  • ইউনিয়ন পরিষদ নিয়মিত সভা, কর্মশালা ও গোষ্ঠী আলোচনা আয়োজন করতে পারে যেখানে বাল্যবিবাহের কুফল, আইনি দিক এবং সমাধান সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।
  • স্থানীয় নাট্য দল, কবি ও শিল্পীদের সাথে সহযোগিতা করে বাল্যবিবাহ বিষয়ক গান, নাটক ও কবিতা প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
  • মসজিদ, মন্দির, স্কুল ও কলেজে বাল্যবিবাহ বিষয়ক পোস্টার, ব্যানার টাঙানো যেতে পারে।
  • ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েবসাইট ও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে তথ্যচিত্র, ভিডিও প্রচার করা যেতে পারে।
  • মাইকেল ব্যবহার করে সচেতনতামূলক বার্তা প্রচার করা যেতে পারে।

উদাহরণ:

  • সিংড়া উপজেলার কলম ইউনিয়ন পরিষদ নিয়মিত মহিলাদের জন্য সচেতনতা সভা আয়োজন করে থাকে। এই সভাগুলোতে বাল্যবিবাহের কুফল, আইনি দিক এবং সমাধান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।
  • নাটোর জেলার বড়েন্দ্রবাজার উপজেলার বড়েন্দ্রবাজার ইউনিয়ন পরিষদ স্থানীয় নাট্য দলের সাথে সহযোগিতা করে বাল্যবিবাহ বিষয়ক নাটক প্রদর্শন করেছে।

আইন প্রয়োগ:

  • ইউনিয়ন পরিষদ গোপন তথ্য সংগ্রহ করে বাল্যবিবাহের ঘটনা রোধ করতে পারে।
  • স্থানীয় পুলিশ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাথে সমন্বয় করে বাল্যবিবাহে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।
  • বিবাহ নিবন্ধন প্রক্রিয়া কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে।

উদাহরণ:

  • কুষ্টিয়া জেলার মীরপুর উপজেলার মীরপুর ইউনিয়ন পরিষদ গোপন তথ্য সংগ্রহ করে একটি বাল্যবিবাহের ঘটনা রোধ করেছে।
  • পাবনা জেলার সাঁড়া উপজেলার সাঁড়া ইউনিয়ন পরিষদ স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় বাল্যবিবাহে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

সমাজসেবা:

  • ইউনিয়ন পরিষদ বাল্যবিবাহের শিকার শিশুদের জন্য শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে পারে।
  • দরিদ্র পরিবারগুলোকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে বাল্যবিবাহের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করা যেতে পারে।
  • মেয়েদের জন্য কিশোরী ক্লাব, স্কুল গার্ল ক্লাব ইত্যাদি গঠন করে তাদের সমাজে সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি করা যেতে পারে।

উদাহরণ:

  • গাজীপুর জেলার কালিয়াকুড়ি উপজেলার কালিয়াকুড়ি ইউনিয়ন পরিষদ বাল্যবিবাহের শিকার শিশুদের জন্য শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে।
  • চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলার বোয়ালখালী ইউনিয়ন পরিষদ দরিদ্র পরিবারগুলোকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে বাল্যবিবাহের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করেছে।
  • জয়পুরহাট জেলার কেন্দ্র উপজেলার কেন্দ্র ইউনিয়ন পরিষদ মেয়েদের জন্য কিশোরী ক্লাব গঠন করে তাদের সমাজে সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে।

অন্যান্য উদ্যোগ:

  • ইউনিয়ন পরিষদ বাল্যবিবাহ রোধে ধর্মীয় নেতা, সমাজ কর্মী, শিক্ষকদের সাথে সমন্বয় করে কাজ করতে পারে।
  • স্থানীয় গণমাধ্যমকে বাল্যবিবাহ বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধিতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • বাল্যবিবাহ রোধে সফল ইউনিয়ন পরিষদগুলোকে অন্যদের জন্য উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা যেতে পারে।

উদাহরণ:

  • নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়ন পরিষদ ধর্মীয় নেতা, সমাজ কর্মী, শিক্ষকদের সাথে সমন্বয় করে কাজ করে বাল্যবিবাহ রোধে সফল হয়েছে।
  • রাজবাড়ী জেলার বাঘা উপজেলার বাঘা ইউনিয়ন পরিষদ স্থানীয় গণমাধ্যমকে বাল্যবিবাহ বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধিতে ব্যবহার করেছে।
  • বগুড়া জেলার ধনোট উপজেলার ধনোট ইউনিয়ন পরিষদ বাল্যবিবাহ রোধে সফল হয়ে অন্যদের জন্য উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।

উপসংহার:

বাল্যবিবাহ রোধে ইউনিয়ন পরিষদের ভূমিকা অপরিসীম। সচেতনতা বৃদ্ধি, আইন প্রয়োগ, সমাজসেবা এবং বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে তারা এই কুপ্রথা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা বাল্যবিবাহমুক্ত একটি সমাজ গড়ে তলা যায়।

Kalam posts

Post a Comment

Previous Post Next Post