মানবাধিকার লঙ্ঘনের এক জ্বলন্ত অধ্যায়, সমাজের অন্ধকার দিক, শিশুদের জীবন ধ্বংসকারী এক কুপ্রথা হলো বাল্যবিবাহ। ১৮ বছরের কম বয়সে ছেলে-মেয়ের বিয়েকে বাল্যবিবাহ বলা হয়। এই কুপ্রথা শুধুমাত্র মেয়েদের জন্যই ক্ষতিকর নয়, বরং ছেলেদের জীবনেও বিরূপ প্রভাব ফেলে।
বাল্যবিবাহের ক্ষতিকর প্রভাব:
- শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব: অল্প বয়সে গর্ভধারণ ও প্রসব মায়ের ও সন্তানের মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়। মেয়েদের শারীরিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, পুষ্টিহীনতা দেখা দেয়। অল্প বয়সে বিবাহিত মেয়েরা মানসিক অসুস্থতা, হতাশা ও সহিংসতার শিকার হয়।
- শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ হ্রাস: বাল্যবিবাহিত মেয়েরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্কুল ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। ফলে তাদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ হ্রাস পায়।
- সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি: বাল্যবিবাহিত মেয়েরা দারিদ্র্যের বৃত্তে আবদ্ধ থাকে। তাদের স্বামী ও পরিবারের উপর নির্ভরশীল হতে হয়।
- পরিবারে সহিংসতা ও ঝুঁকি: বাল্যবিবাহিত মেয়েরা যৌন নির্যাতন, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়।
বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে করণীয়:
- সচেতনতা বৃদ্ধি: বাল্যবিবাহের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করা জরুরি। গ্রাম-গঞ্জের মানুষ, বিশেষ করে অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কর্মশালা, আলোচনাসভা, সেমিনার আয়োজন করা উচিত।
- শিক্ষার প্রসার: মেয়েদের শিক্ষার উপর জোর দেওয়া উচিত। সরকারের উচিত বিনামূল্যের শিক্ষা ব্যবস্থা, বৃত্তি প্রদান, মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার জন্য বিশেষ উৎসাহ প্রদান করা।
- আইন প্রয়োগ: বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা উচিত। স্থানীয় প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে সচেতন করে তোলা উচিত।
- অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন: মেয়েদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলা উচিত। তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া উচিত।
- সামাজিক রীতিনীতির পরিবর্তন: বাল্যবিবাহের মতো কুপ্রথা বন্ধ করতে হলে সামাজিক রীতিনীতির পরিবর্তন আনা জরুরি। ধর্মীয় নেতা, সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি।
গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ:
- পরিবারের ভূমিকা: বাল্যবিবাহ রোধে পরিবারের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অভিভাবকদের উচিত তাদের ছেলে-মেয়েদের ১৮ বছর বয়সের আগে বিবাহ না দেওয়া।
- মাধ্যমের ভূমিকা: টেলিভিশন, রেডিও, সংবাদপত্র, সামাজিক মাধ্যমের মাধ্যমে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো উচিত।
- युवाদের ভূমিকা: সমাজের যুবসম্প্রদায়কে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।
- সরকারের ভূমিকা: সরকারের উচিত বাল্যবিবাহ রোধে দীর্ঘমেয়াদী নীতিমালা প্রণয়ন করা এবং কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা।
উপসংহার:
বাল্যবিবাহ আমাদের সমাজের একটি কলঙ্ক। এই কুপ্রথা থেকে আমাদের সমাজ ও শিশুদের মুক্ত করতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই আমরা বাল্যবিবাহমুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে পারি।
মনে রাখবেন:
- বাল্যবিবাহ একটি অপরাধ।
- বাল্যবিবাহ রোধে আমাদের সকলেরই দায়িত্ব রয়েছে।
- আসুন আমরা সকলে মিলে বাল্যবিবাহমুক্ত সমাজ গড়ে তুলি।